Wednesday 17 August 2016

গর্ভপাত করার পদ্ধতি...........


গর্ভপাতের পদ্ধতি আরেকটু বিস্তারিত বলতে গেলে প্রয়োজন গর্ভাবস্থার জেস্টেশনাল বয়েস সম্মন্ধে জ্ঞান। গর্ভাবস্থার জেস্টেশনাল বয়েস সাধারণত গণনা করা হয় (প্রেগন্যান্ট হওয়ার আগে) শেষবার পিরিওড শুরু হওয়ার দিন থেকে। জেস্টেশনাল বয়েস ৯ সপ্তাহের (৬৩ দিন) থেকে কম হলে সাধারণত Mifepristone এবং misoprostol নামের দুটো ঔষধ ব্যবহার করা হয়। গর্ভপাতের আগে আলটাসোনোগ্রাফি করে গর্ভের সঠিক বয়স নিশ্চিত হতে হয়। এটাও বুঝে নিতে হবে ভ্রূণ জরায়ুতেই রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভ্রূণ জরায়ুর পরিবর্তে ফ্যালোপিয়ান নলের মধ্যেই বাড়তে শুরু করে (এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি)। এক্টোপিক প্রেগন্যান্সিতে Mifepristone এবং misoprostol ব্যবহার করে গর্ভপাত করা সম্ভব নয়। পরীক্ষা করে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ডাক্তারের উপস্থিতিতে প্রথমে ২০০ মি.গ্রা. Mifepristone (200 mg) খাওয়ানো হয় (গিলতে হয়)। এই ওষুধটি খাবার আগে হালকা কিছু খেয়ে নিলে বমি হবার সম্ভাবনা কম। Mifepristone খাবার কিছুক্ষণ পরেই ব্লিডিং শুরু হতে পারে (নাও হতে পারে)। রক্তপাত শুরু হোক বা না হোক, Mifepristone খাবার ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা পর ৪টে (4 টে) misoprostol ০.২ মি.গ্রা. (২00 micro gram µg) ট্যাবলেট একসাথে জিবের তলায় আধাঘন্টা রেখে তারপর গিলতে হবে। মনে রাখবেন ট্যাবলেটগুলি জিবের তলায় আধঘন্টা রেখে দেওয়া কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জিবের তলায় আধঘন্টা রেখে দেওয়ার পরিবর্তে ওই চারটি misoprostol ট্যাবলেটকে যোনির গভীরে প্রবেশ করিয়ে দিলেও কাজ হবে। উল্লেখ্য যে এই দুটি ওষুধের ডোজ নির্ভর করে গর্ভসঞ্চারের ঠিক কতদিন পর গর্ভপাত করা হচ্ছে তার উপর। Misoprostol নেবার ৫ ঘন্টার মধ্যেই abortion হয়ে যাবার কথা। প্রায় ৭ থেকে ১০ দিনের মাথায় ডাক্তারের কাছে গিয়ে এটা নিশ্চিত হতে হয় যে abortion হয়ে গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই abortion হয়ে যায়। তবে আবারও বলছি যে উপযুক্ত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া গর্ভপাত করাবেন না। গর্ভপাতের সময় স্বাভাবিক পিরিওডের সময় যেমন রক্তক্ষরণ হয় তেমন বা তার থেকে কিছু বেশি রক্তক্ষরণ হতে পারে। তার সাথে তলপেটে ব্যাথা বা ক্র্যাম্প হতে পারে। কিন্তু যদি খুব বেশি রক্তক্ষরণ হয় (চার থেকে ৫ টি প্যাড প্রতি ঘন্টায় বা ২৪ ঘন্টায় ১২ টি বা তার থেকে বেশি প্যাড) বা সাথে জ্বর হয় তবে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ অবশ্য কর্তব্য। শতকরা ৫ শতাংশ মহিলার ক্ষেত্রে ঔষধের দ্বারা abortion সফল হয় না। তাদের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারই একমাত্র রাস্তা। বস্তুতপক্ষে ৭ সপ্তাহের থেকে কম জেস্টেশনের ক্ষেত্রে উপরোক্ত দুটি ঔষধের মাধ্যেমে গর্ভপাত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গর্ভপাতের থেকে বেশি কার্যকারী। ওই দুটি ঔষধ ছাড়াও Methotrexate এবং misoprostol ব্যবহার করেও গর্ভপাত সম্ভব। তবে গর্ভাবস্থার প্রথম তিনমাসের পরেও ঔষধ ব্যবহার করে abortion হতে পারে। বিস্তারিত জানতে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
গর্ভের জেস্টেশনাল বয়েস ১৫ সপ্তাহ পর্যন্ত হলে অস্ত্রোপচারেরে মাধ্যমে গর্ভপাতের সময় যোনির মাধ্যমে বিশেষ যন্ত্র (যেমন সিরিঞ্জ বা নল) ঢুকিয়ে গর্ভের বিভিন্ন পদার্থ যেমন ভ্রূণ, অমরা বা প্লাসেন্টা, বিভিন্ন পর্দা ইত্যাদি চোষণ বা শোষন করে বাইরে বের করে abortion ঘটানো হয়। সাধারণত এই পদ্ধতির সময় সার্ভিক্স স্থানীয়ভাবে অসাড় করে নেওয়া হয়। গর্ভের বয়েস ১৫ সপ্তাহের থেকে বেশি হলে গর্ভপাতের পদ্ধতি আরও একটু জটিল হয়। কিন্তু সঠিক ডাক্তার ও চিকিৎসালয়ে গিয়ে তখনো নিরাপদেই গর্ভপাত সম্ভব।
উত্তর শেষ করার আগে আবারও বলছি গর্ভপাত করতে হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে কাজ করুন। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে গর্ভপাত একটি খুবই নিরাপদ পদ্ধতি – কোন বিশেষ সাইড এফেক্ট হয় না। কিন্তু হাতুরে ডাক্তার, ওঝা, বাজে ক্লিনিক বা নিজে নিজেই গর্ভনাশ করতে গেলে বিভিন্ন সমস্যা, এমনকি মৃত্যু হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। আরও একটি পরামর্শ – যৌন সঙ্গমের সময় উপযুক্ত নিরোধ বা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করুন, যাতে গর্ভপাতের প্রয়োজনই না হয়

No comments:

Post a Comment